সন্তান মানুষ করবেন কিভাবে চানক্য উবাচ How to guide a child through the light of chanakya
পৃথিবীতে কেউ মানুষ হয়ে
জন্মায় না। আর পাঁচটা পশুর মতো জন্ম নিয়ে মানুষ হতে হয়। যখন সে মানুষ হয়ে ওঠে তখন
তার দ্বিতীয় বার জন্ম হয়। তাই প্রকৃত মানুষেরই আর এক নাম দ্বিজ। দ্বিতীয়বার জন্ম
হয় যার তারই নাম দ্বিজ। মান আর হুঁশ –এই
দুটিতে যে পূর্ণ সেই মানুষ।
আপনি কি সন্তানের পিতা বা
মাতা, অথবা হতে চলেছেন, কিংবা হবেন ভাবছেন
? তাহলে এটি সম্পূর্ণ রূপে আপনার জন্য। সন্তানকে সত্তিকারের মানুষ করে তোলার জন্য
মহামতি চানক্য তাঁর নীতি শাস্ত্র গ্রন্থে বেশ কিছু নির্দেশিকা দিয়েছেন। তবে
চলুন দেখা যাক কিভাবে সন্তান মানুষ করতে হয়।
জন্মের প্রথম পাঁচ বছর
পর্যন্ত লালন করুন। শাষন নয় অত্যন্ত গভীর ভালবাসায় মমতায় স্নেহের বেড়াজালে আগলে
রাখতে হয়। রাখতে হয় আলো আঁধারি মায়াবী জগতে। বাগানের সবথেকে নাজুক চারাগাছটির
যেভাবে যত্ন নেন ঠিক সেভাবেই।
পরবর্তী দশ বছর কঠোর সাশনে। কঠোর অনুশাষনে তাকে শেখাতে
হয় ন্যায় নীতি বোধ, উচিৎ অনুচিত ও ভালো মন্দের তফাৎ। এটা কেবল উপদেশে কাজ হয় না।
মনে পড়ছে সেই চিরন্তন বাংলা কথাটা – অপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখাও। হ্যাঁ, charity begins at home একদম সেটাই ফলো করুতে হবা অপনাকে।
আর যখন ষোল বছর বয়স হয়ে যায়
তখন তাকে বন্ধু করে নিতে হয়। এই সময় তার চেনা শরীরটা অচেনা লাগে। শরীরে আসে নানান
রোমাঞ্চ – নানান পরিবর্তন – চেনা পৃথিবীটাই তখন অচেন হয়ে যায়। এই কঠিন মুহূর্তে
আপনিই তার একমাত্র বন্ধু। একমাত্র আপনারই কর্তব্য ও ধর্ম নতুন পৃথিবীটাকে নতুন করে
চিনিয়ে দেওয়া। জীবনের গাড়ীটাকে সঠিক ট্র্যাকে থ্রাস্ট করা। চারিদিকে একটু তাকিয়ে দেখুন অধিকাংশ বাবা-মা’ই
এই সময়ই দূরে সররে যায়। আর তাতেই যত বিপত্তি।
চানক্য বলছেন সেই প্রকৃত
পুত্র যে পিতৃ ভক্ত হয়। একটা সুগন্ধী ফুলের গাছ যেমন সমগ্র অরণ্যকে সুবাসিত করে
তোলে তেমনি এক সুপুত্রই বংশের মুখ উজ্জ্বল করতে যথেষ্ঠ। এক শুষ্ক বৃক্ষ যেমন যেমন
গোটা অরণ্যকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে তেমনি এক কুপুত্রই বংশের মুখে
চুনকালি মাখাতে যথেষ্ঠ। এক চদ্রের জোছনা যেমন রাত্রীকে মহিমান্বিত করে তোলে তেমনি
এক বিদ্যান সুপুত্রই গোটা বংশকে গৌরবান্বিত করে তোলে।
চানক্য আরো বলছেন একাধিক
সন্তানের জনক জননী হওয়াই সকল শোক ও সন্তাপের কারণ। যেখানে এক সন্তানকেই উপযুক্ত
পরিবেষ ও উপযুক্ত দৈহিক ও মানসিক বিকাশের সম্পূর্ণ সুযোগ দিতে পারলে সংসারে
সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী। শত সহস্র তারার আলোয় রাতের অন্ধকার দূরীভূত হয়
না। বরং এক চন্দ্রই যেমন রাতের অন্ধকার দূর করে
তেমনি গুনহীন শত সন্তানের পরিবর্তে এক গুনবান সান্তানই যথেষ্ট।
এমন সন্তানের জন্ম দিয়ে লাভ
কী যে না বিদ্যান আর না ভক্তিমান। এমন মূর্খ সন্তানের জনক জননীকে সারা জীবন সংসার-তাপ-জ্বালায়
অষ্টপ্রহর জ্বলে মরতে হয়। মুর্খ সন্তানই পিতার একমাত্র শত্রু।
এবার তিনি জানাচ্ছেন
কিভাবে সন্তানকে মানুষ করবেন।
পরিশেষে
বলি, সংসারের বাঁধনই হল সন্তান। প্রয়োজনে
দত্তক নিন কিন্তু সংসারে সন্তানের কোন বিকল্প নেই। সে পুত্র বা কন্যা যাই হোক।
Comments
Post a Comment