শত্রু দমন করবেন কিভাবে

কিভাবে শত্রুকে ঘায়েল করবেন

পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নাই যার শত্রু নেই, এমন কোন পরিবার নাই যার শত্রু নেই, এমন কোন দেশ নাই যার শত্রু নেই।

তাই সে আপনি ব্যক্তি নায়ক হোন বা রাষ্ট্র নায়ক, অন্তত পাঁচ সাত টা ভিলেন আপনার আছেই। তাদের বধ করতে পারলে তবেই আপনি নায়ক নইলে you are nothing but a loser. ।

সুতরাং শত্রু বধ করতেই হবে। বধ না করুন দমনতো করতেই হয়। কিন্তু কিভাবে? সেটা জানার আগে Prevention Is Better Than Cure  এই কথাটার আগে বুঝে নিই। এটা রোগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তেমনি শত্রুর জন্যও ভীষন জরুরী।

মহামতি চানক্য বলছেন, আজ যে আপনার প্রিয় বন্ধু কাল সে আপনার শত্রু হয়ে যেতেই পারে। তাই রাবনের মৃত্ত্যু বানের মতো নিজের দুর্বলতা নিজের কাছেই গোপন রাখুন।কখনোই কাউকে জানতে দেবেন না।  

এছাড়াও একটা কথা খুব প্রচলত আছে, যে বোবার কোন শত্রু নেই। অর্থাৎ যারা বেশি কথা বলে তাদেরই শত্রু বেশি হয়। সুতরাং কম কথা বলুন। এবং যেটুকু বলবেন তা যেন শ্রুতিমধুর হয়। রূঢ বা কটু কথাই বেশিরভগ ক্ষেত্রে শত্রুতার জন্ম দেয়। শ্রুতিমধুর কথা বলা খুবই কঠিন কাজ। সুতরাং ভুল হতেই পারে। শত্রু জন্মাতেই পারে। তাহলে আসুন এখন জেনে নেওয়া যাক সেই শত্রু দমন করব কেমন করে।  

এক )

সাঁতার দিয়ে আসবি ফিরে গায়ের বসন ভিজবে কেনে।

কিছুদিন মনে মনে শ্যামের পিরিত রাখ গোপনে। এটি একটি বাউল গানের লাইন। অর্থাৎ আপনার মূল উদ্দেশ্য সাধন করার আগে পর্যন্ত কেউ যেন সেটি জানতে না পারে। শত্রু যেন জানতে না পারে আপনি কী করতে চলেছেন। আমার যেমন বেনি তেমনি রবে চুল ভিজাব না। এধার ওধার সাঁতার পাথার করি আনাগোনা। নিজের আসল লক্ষ্য ঢেকে একটা ফাঁকিবাজি লক্ষ্য সবাইকে দেখান যাতে শত্রু আপনার উদ্দেশ্য ধরতে না পারে।

দুই)

গৌর পেতে নিতাই ধরুন।

শত্রু যদি আপনার থেকে অনেক ক্ষমতাবান হন তবে, সরাসরি তাকে আক্রমন না করে এমন কিছুকে হাত করুন যা তার অত্যন্ত প্রিয়। তাকে হাত করে শত্রুর সকল দুর্বলতা জেনে নিন।

তিন)

শত্রুর মাছ চুরি করুক তারই বিড়াল

শত্রু নিধনে আপনি নিজে হাত লাগাবেন না। তারই প্রিয় পাত্রকে কাজে লাগান। ধরা পড়লে তারই বিড়াল, মার খেলে তারই বিড়াল । নইলে যা লাভ সবই আপনার।

চার)

শত্রু কাঁঠাল পাড়ুক আপনি তেল দিন গোঁফে

শত্রুকে খাটিয়ে খাটিয়ে এমন ক্লান্ত করুন যাতে ফল ভোগ করার মতো শক্তি তার না থাকে। তখন আপনি পূর্ণ শক্তিতে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ফল ভোগ করন।

পাঁচ)

শত্রুর ঘরে আগুন লাগলে বেগুন পোড়া করুন

শত্রুর বাড়িতে গৃহ যুদ্ধ লাগিয়ে দিন। গৃহে যখন ভাই ভাইয়ে অশান্তি, রাষ্ট্রে যখন অস্থির পরিবেশ তাকেই বলে ঘরে আগুন লাগা। আর এই অশান্তির সৎ ব্যাবহার করুন।

ছয়)

দক্ষিনে ওড়ান যুদ্ধ বিমান বোম ফেলুন উত্তরে।

ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-২ মনে পড়ছে? ঠিক সেভাবেই শত্রুর ভাবনাকে চকমা দিন। শত্রুকে ভাবতে দিন এক আর করুন আর এক।

সাত)

তিলকে তাল করুন।

যা সামান্য ঘটনা তাকেই বার বার প্রচার করে আসামান্য করে তুলুন। এতেই শত্রু বিব্রত হয়ে যাবে। কিংকর্তব্য বিমুঢ হয়ে যাবে। এটা কিভাবে করতে হয় তা ভারতীয় মিডিয়াগুলিকে দেখলেই শিখে যাবেন।

আট)

নিজের বাক কেটে অপরের যাত্র ভঙ্গ

শত্রুর সামনে নিজেকে বোকার হদ্দ প্রমান করতে নিজের নিজের সামান্য পরিমান সহনীয় ক্ষতি করুন। এতে শত্রু আপনাকে বোকা ভেবে সর্বশক্তি দিয়ে আর আক্রমন করবে না। 

নয়)

আগুন নেভার আগে ছাই ঘাঁটবেন না।

অর্থাৎ শত্রু সম্পূর্ণ পরাজিত ও ক্লান্ত হওয়ার আগে তাকে ঘাঁটাবেন না। উৎসাহ ভাল কিন্ত অতি উৎসাহ কখনোই নয়।

দশ)

বিষের হাড়িতে মধু মাখিয়ে রাখুন (হানিট্রাপ)

চানক্য বলছেন শত্রুর সঙ্গে দেখা হলেই মধুর ব্যবহার রাখুন কিন্তু আড়ালে আবডালে তার নিন্দা করুন। যাতে তার শত্রু সংখ্যা বাড়তে থাকে আর সে বুঝতেও না পারে। আপনার হাসিমুখ দেখে শত্রু আপনাকে সাদাসিধে ভোলেভালা ভাবুক – কোপটা মারবেন সুযোগ বুঝেই।

এগার)

জলে কুমির বনে বাঘ

কুমির জলে স্বচ্ছন্দ এবং বাঘ স্বচ্ছন্দ থাকে বনে। তাই জলে কুমিরের সাথে লড়াই করবেন না। বনে বাঘের সাথও না। আপনার শত্রু কোথায় স্বচ্ছন্দ তা ভালো করে জানুন। তাকে তার স্বাচ্ছন্দের জায়গা থেকে আপনার স্বাচ্ছন্দের জায়গায় নিয়ে আসুন তার পর আরামসে ...

বার)

সপকে আছে কিনা দেখতে ঝোপে বাড়ি মারুন

মানে আনএস্পেক্টেড এমন কিছু করুন যাতে শত্রু ওটায় রেস্পণ্ড করতে গিয়ে আপনাকে তার অবস্থান জানিয়ে দেয়। কিন্তু শত্রুওতো এটা করতে পারে। তখন আপনি যেন দুম করে রেস্পণ্ড না করে ফেলেন।

তের)

শত্রুকে দেওয়ালে ঠেকাবেন না

শত্রু যদি বুঝে যায় যে তার পালানোর পথ নাই তাহলে সে মরিয়া হয়ে লড়বে। যাকে বলে করেঙ্গ ইয়ে মরেঙ্গে। আর এই নীতিই শেষ জয় এনে দিতে পায়। তাকে বিশ্বাস করতে দিন যে সে চাইলেই পালাতে পারে। এতে তার লড়াই করার জোশ অনেকটাই কমে যাবে। তখনই অপনি জয়ী হতে পারবেন।

চোদ্দ)

ধরলে ধরুন পালের গোদা

একগাদা শত্রুর পেছনে আলাদা আলাদা না  লেগে সেরা শত্রুকে বাছু, বড়টাকে ধরুন, তার পেছনেই সর্বশক্তি প্রয়োগ করুন। পরাস্ত করুন। বাকিরা আপনা আপ পালাবে। 

পনের)

পেট্রোল পাম্প বন্ধ করুন

আমি লালুদার লোক বলে যখন ভুলুরা আপনাকে গরম দেখায় তখন এই নীতি খুবই কার্জকরী। গোপনে লালুদার কাছে যান, তার সাথে আলাপ পরিচয় করুন, প্রমান করুন আপনি নিপাট ভদ্র লোক। তারপর তার হাতে চ্যালার অকাম কুকামের ফিরিস্তি ধরিয়ে দিন। লালুদা পেট্রল পাম্প বন্ধ করে দেন। ভুলু তখন ঘেউ ঘেউ না করে মিউ মিউ করতে বাধ্য।  

ষোল)

হালুম দিলে মিয়াও, মিয়াও দিলে হালুম

চানক্য বলছেন শত্রু যদি আপনার থেকে শক্তিশালী হয় তবে তার সাথে বিনম্র ব্যবহার করুন। শত্রু যদি আপনার থেকে দুর্বল হয় তাহলে তার সাথে কঠোর ব্যবহার করুন। কিন্তু শত্রু যদি আপনার সমান ক্ষমতা সম্পন্ন হয় তাহলে মিয়াও অথবা হালুম সিচুয়েশান অনুযায়ী যেটা প্রযোজ্য সেটাই অথবা দুটোই অর্থাৎ নরম গরম ব্যবহার করুন।

সতের)

ঝিকে মেরে বউকে শেখান

দুটো সমপর্যায়ের সমান শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মধ্যে সরাসরি লড়াই ক্ষতিকর। সে ক্ষেত্রে আপনার অসন্তোষ প্রকাশ করতে তুলনামূলক ছোট কোন শত্রুকে সাইজ করে দিন। বড় শত্রু সঠিক ম্যাসেজ পেয়ে যাবে।

আঠার)

গাছে তুলে মই কেড়ে নিন

শত্রুকে ভুলিয়ে ভালিয়ে লোভ দেখিয়ে ছল করে হোক বা কৌশল করেই হোক কোন খারাপ জায়গায়বা খারাপ পরিস্থিতিতে ফেলে দিন। তারপর বেরনোর পথ দিন বন্ধ করে।

ঊনিশ)

শিবির ফাঁকা করুন

হঠাৎ কোন বড় শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়ার সম্ভাবনা এলে তৎক্ষণাৎ শিবির ভাঁকা করে দিন। তারপর নার্ভাস না হয়ে প্রশান্তভাবে অপেক্ষা করুন। শত্রু আপনার প্রশান্তি দেখে নিজেই নার্ভাস হয়ে পড়বে। সে ভাববে, অপনি বড়সড় কোন ফাঁদ প্রতে রেখেছেন। সে তখন টোটালি কনফিউজড ।  

কুড়ি)

পলায়ন

উপরের কোন কৌশলই যদি কাজে না লাগে বা কাজে না লাগাতে পারেন তাহলে স্রেফ পলায়ন করুন।  চানক্য কলছেন  দূর্জন ব্যক্তি থেকে শত জোজন দূরে থাকতে। আত্ম সমর্পন মানে সম্পূর্ণ পরাজয় কম্প্রমাইজ মানে অর্থেক পরাজয় কিন্তু পালিয়া যাওয়া মানে you have a chance to fight an another day.

কৌশলগুলি খুবই সহজ মনে হতে পারে। মনে রাখাও খুব সহজ, কিন্তু স্থান কাল ও পাত্র বিশেষে দাবার গুটির মতো সঠিক চাল দেওয়াটা খুবই কঠিন। এখানেই চাই আপনার বিচক্ষনতা।

প্রিয় বন্ধু ভিডিওটি আপনাদের কেমন লাগল কমেণ্ড করে জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে লাইক করুন, শেয়ার করুন, সাবস্ক্রাইব করেছেনতো ? অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সবাই।