Who is Rama and he is in Indian Politics


সাল ২০১৯ । স্থান ভারতবর্ষ। দেশ মোদি ময় মোদি দেশ ময়। একটা জাতীয়তাবোধের জোয়ার। জোয়ারে ভাষছে গোটা দেশ। যে জোয়ারের নতুন স্লোগান জয় শ্রী রাম। কারো কাছে এটা একটা গালা-গালি। কারো কাছে এটা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। কারন রাম হিন্দু ধর্মের সাথে জড়িয়ে আছে। সুতরাং রাজনীতির ধর্ম বা ধর্মের রাজনীতিকে সিকেয় তুলেদিয়ে আমরা বরং এই আবসরে রামের রান্নাঘরে ঢুকে দেখি রামের হাল হকিকত। একটু সহজ করে বললে, কে রাম, কেন রাম, কোথায় রাম।

রাম একটি পুং লিঙ্গাত্মক সংস্কৃত  নাম বাচক শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হল – যাকে রমন করা যায় বা উপভোগ করা যায়।  এর  স্ত্রীলিঙ্গাত্মক শব্দ হল রামি।  শব্দটি রাত্রির বিশেষণ ।
ব্যক্তি রাম হিসাবে রাম শব্দটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋক বেদের দশম মণ্ডলের তিরানব্বইতম অধ্যায়ের  চৌদ্দ নম্বর শ্লোকে। যেখানে বলা হয়েছে –
पर तद दुःशीमे पर्थवाने वेने पर रामे वोचमसुरेमघवत्सु

ये युक्त्वाय पञ्च शतास्मयु पथा विश्राव्येषाम || 

pra tad duḥśīme pṛthavāne vene pra rāme vocamasuremaghavatsu | 

ye yuktvāya pañca śatāsmayu pathā viśrāvyeṣām || 

দুঃসীম প্রথবন –এর  স্তব করি,  – বেণ ও রামের স্তব করি
বিশিষ্ট অসুরদের স্তব করি এবং রাজন্যবর্গের স্তব করি।।
বেদে দুই জন রামের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রথমজন হলেন মার্গবেয় বা ঔপতশ্বিনী রাম এবং দ্বিতীয় জন হলেন জামদগ্ন্য রাম।
বেদ পরবর্তি যুগে তিনজন রাম
 বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রাম। ইনি দশরথ পুত্র এবং রঘু বংশ জাত বা সূর্য বংশ জাত।
বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। ইনিই বেদ বর্ণিত জামদগ্ন্য বা ভার্গব রাম নামে পরিচিত। ইনি অমর।
তিন নম্বর হলেন কৃষ্ণের জেষ্ঠ্য ভ্রাতা বলরাম। অনেকে কৃষ্ণের সাথে এঁকেও বিষ্ণুর অষ্টম অবতার বলেন।

বিষ্ণুর সহস্র নাম স্তোত্রে বিষ্ণুর ৩৯৪ তম নামটি হল রাম। আদি শঙ্করের টিকা অনুসারে রাম শব্দটির দুটি অর্থ – প্রথমটি হল – যোগিরা যার সঙ্গে রমণ বা ধ্যান করেন। যোগ সাধনার সাতটি কুণ্ডলিনী চক্রের তৃতীয় চক্র অর্থাৎ মণিপুরম চক্রের ধ্বনি রূপ হল রাম।
 দ্বিতীয়টি হল সেই পরম ব্রহ্ম বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রূপ – দশরথ পুত্র রামচন্দ্র।
 প্রাচীন যুগের ভারত আর আজকের ভারত এক নয়। স্থান ও কালের পরিবর্তনের সাথে উচ্চারণও গেছে বদলে। তাই এক রাম নানা রূপে নানা নামে নানা স্থানে।
জাভানিজ ভাষয় এই রাম হলেন  - রামবিজয়
খামের ভাষায়  -                                        ফ্রেয়াহ রাম
লাও ও থাই ভাষায় –                       ফ্রা রাম
মালয় ভাষায় -                                 মেগাত সেরি রাম
মারানাও ভাষায় -                            রাকা বানতুগান
তামিল ভাষায় -                               রামার

ভারত ও নেপালে রামের পূজা এখনও বহুল প্রচলিত। রাম উপাসনা-কেন্দ্রিক সম্প্রদায়গুলি রামকে বিষ্ণুর অবতার না মনে করে পরম ঈশ্বরই মনে করেন।
হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায় ও বৈষ্ণব ধর্মগ্রন্থ গুলিতে যেসব জনপ্রিয় দেবতার কথা পাওয়া যায় – তাদের অন্যতম হলেন রাম।
শুধু ভারত কেন সারা দক্ষিন ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার জনপ্রিয় দেবতা হলেন রাম।
লোক বিশ্বাস পুরাতাত্মিক নিদর্শন অনুসারে রামের জন্মস্থান হল অযোধ্যা শহর। সেখানে আজও রামলালা বা শিশু রাম মূর্তির পূজা হয়।
রাম সংক্রান্ত পৌরানিক কাহিনীর প্রধান উৎস হল ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ন।
অযোদ্যার রাজা দশরথ ও তাঁর প্রধান স্ত্রী কৌশল্যার জেষ্টপুত্র হলেন রাম। হিন্দুরা রামকে বলে মর্যাদা পুরুষোত্তম। অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ পুরুষ বা অত্মনিয়ন্ত্রনের অধিপতি বা গুণাধীশ। 
বনবাসে থাকা কালিন লঙ্কার রাজা রাবন রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতাকে হরন করেন। সীতাকে উদ্ধারের জন্য রামের সাথে রাবনের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে রামের প্রথান সেনা ছিলেন হনুমান। এই হনুমান বাহিনীই নিজেদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য – জয় শ্রী রাম বাক্য বন্ধটি ব্যবহার করে ছিলেন।
রাম সীতাকে উদ্ধেরের পর অযোধ্যায় ফিরে আসেন। সেখানে তার রাজ্যাভিসেক হয়। পরে তিনি একহন সম্রাটে পরিনত হন। তার রাজ্যে প্রজারা সুখে শান্তিতে বাস করত। তাঁর রাজত্ত্বকালে রাজ্যের সমৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার অব্যাহত ছিল। এই জন্যই রামের শাসনের অনুসরণে সুশাসিত রাজ্যকে রামরাজ্য বলার প্রবনতা চাল্যু হয়।

শুধু বাল্মিকি রচিত রামায়ন নয়, বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত পুরাণ এমনকি মহাভারতেও রামের উপাখ্যান উল্লিখিত  আছে।
বাল্মিকি রচিত রামায়ন ছাড়াও সংস্কৃত ভাষায় আরো একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ রামায়ন হল অধ্যাত্ম রামায়ন।
ভারতের অধিকাংশ প্রধান ভাষায় নিজষ্য রামায়ন আছে। সেগুলি মূলত অনুবাদ সাহিত্য হলেও আঞ্চলিক সংস্কৃতি তার পরতে পরতে মিশে আছে।
তামিক কবি কম্বরের লেখা – রামাবতারম
বাঙালি কবি কৃত্তিবাসের লেখা – শ্রীরাম পাঁচালি
হিন্দি কবি তুলসীদাসের লেখা – রামচরিতমানস
কণ্ণড় কবি কুভেম্পুরের লেখা – শ্রীরামদর্শনম
তেলেগু কবি বিশ্বনাথ সত্যনারায়নের  - রামায়ন কল্পবৃক্ষম
শুধু ভারত কেন দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও রামায়নের পাঠান্তর দেখা যায়।
ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের -  কাকাউইন রামায়ন
বালি দ্বীপার -  রামকবচ
মালয়েশিয়ার – হিকায়ত সেরি রাম
ফিলিপিনসের – মারাদিয়া লাওয়ানাও
থাইল্যাণ্ডের – রামকিয়ান বা ফ্রা রাম 
মায়ানমারের – ইয়ামা জাতাদাও
কম্বোডিয়ার – রেয়ামকেরে
ব্যাঙ্ককের ওয়াট ফ্রা কায়েউ মন্দিরে রামায়নের ছবি এখনো রয়েছে।
লাওসের – ফ্রা লাক ফ্রা লাম গ্রন্থে আবার গৌতম বুদ্ধকে রামের অবতার বলা হয়েছে।
বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে রামের পূজা অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। পশ্চমবঙ্গের কাটোয়া মহকুমায় প্রায় কুড়িটির মতো রামের মূর্তি আছে। বাঁকুড়া জেলাতেও প্রচুর রামের মন্দির দেখা যায়। রঘুনাথ শিলা রূপেও বাংলার গ্রামে গ্রামে রামের পূজা হয়।
রাঢ় বাংলায় প্রত্নতাত্মিকেরা এমন অনেক মুদ্রা পেয়েছেন যাতে রামের ছবি আছে।
কাজি নজরুল ইসলাম রামকে নিয়ে লিখেছেন অনেক গান।
রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, রানী রাসমনী, মুরারী গুপ্ত, চৈতন্য জীবনীকার দয়ানন্দ , অদ্বৈত আচার্য সহ অনেকেই রামের পূজা করতেন।
রানী রাসমনী রামনবমীতে রথযাত্রাও করতেন।
বীর হাম্বীর বাঁকুড়াজেলায় অনেক রাম মন্দির তৈরি করেছিলেন।
বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়াতে এখনো দুর্গাপূজার শেষে রাবণকাটা নৃত্য হয়।

এই সেই রাম। যার নাম নেওয়ায় হনুমানের লেজ পুড়েছিল লঙ্কায়। এখন ঘর পুড়ছে বাংলার। এই সেই রাম যার ধ্যান করলে ব্যক্তিত্ত্বের বিকাশ হয় আজ তার নামে চলছে দেশের রাজনীতি। তা চলুক, কিন্তু যে সেটা হঠাৎ কাল হয়ে যাবে কে তা জানতো।
  তা সে যাই হোক রাম নামে যদি – ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নিতে পারে,
রাম নামে যদি – ভারতে সত্যিকারের রাম রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় – তবে তাই হোক।

জয় শ্রী রাম !

Comments

Popular posts from this blog

How to convert any number into word Indian Rupees in Excel

শত্রু দমন করবেন কিভাবে

অখণ্ড ভারত কত বড় ছিল?